গত সপ্তাহে, EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.0500 লেভেল টেস্ট করেছিল কিন্তু মূল্য এই গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স লেভেলের (D1 টাইমফ্রেমে বলিংগার ব্যান্ডস সূচকের উপরের লাইন) ওপরে স্থিতিশীল হতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পেয়ারের মূল্যের আকস্মিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা মূলত ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে হয়েছিল, যখন ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরিবর্তে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট "পারস্পরিক শুল্ক পদ্ধতি" প্রস্তুতের জন্য একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন। পাশাপাশি, এটি নিশ্চিত হয় যে এই শুল্ক সব দেশের জন্য সমান হবে না, বরং প্রতিটি দেশের জন্য আলাদাভাবে করের হার নির্ধারণ করা হবে। একটি কর্মপরিষদ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করবে, যার পর ট্রাম্প পৃথক দেশভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
মার্কেটের ট্রেডাররা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, যদিও এই বিষয়টি পুরোপুরি আলোচনা থেকে চলে যায়নি—এটি কেবল কয়েক মাসের জন্য স্থগিত হয়েছে। তবে এটি বিনিয়োগকারীদের মনোবল পুনরুদ্ধার করার জন্য যথেষ্ট ছিল, যা ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি করে এবং নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.0500 লেভেল টেস্ট করতে সক্ষম হয়।
তবে, পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সূত্র অনুযায়ী, ব্রাসেলস যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট আমেরিকান খাদ্যপণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হতে পারে। গুজব রয়েছে যে প্রথম ধাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহৃত সয়াবিনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। যদি ইইউ এই ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তাহলে মার্কেটে ঝুঁকি গ্রহণ না করার প্রবণতা ফিরে আসতে পারে, যা ডলারের চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আগামী সপ্তাহের ক্যালেন্ডারে বড় কোনো ইভেন্ট নেই, তবে অল্প কয়েকটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার-মঙ্গলবার
সোমবার ফেডারেল রিজার্ভের দুইজন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্ধারিত রয়েছে, তারা হচ্ছেন ফিলাডেলফিয়া ফেডের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হার্কার এবং ফেড গভর্নর মিশেল বোম্যান। বিনিয়োগকারীরা মূলত বোম্যানের বক্তব্যের দিকেই বেশি মনোযোগ দেবে, কারণ হার্কার এই বছর ভোটাধিকার প্রাপ্ত নন এবং তিনি জুনে অবসর নেবেন। ফলে, তার বক্তব্য মার্কেটে তেমন প্রভাব ফেলবে না।
অপরদিকে, বোম্যানের মন্তব্য মার্কেটে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। জানুয়ারির শেষ দিকে তার সর্বশেষ প্রকাশ্য বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন যে ফেডের ভবিষ্যৎ নীতিগত সিদ্ধান্ত "সতর্ক ও ধীরগতিতে নেওয়া উচিত, কারণ মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার ঝুঁকি বিদ্যমান"। তবে, তিনি এই মন্তব্যটি সর্বশেষ CPI ও PPI প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই করেছিলেন, যেখান জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি নির্দেশিত হয়েছিল।
মঙ্গলবার জার্মানিতে ফেব্রুয়ারির ZEW সূচক প্রকাশিত হবে। পূর্বাভাস অনুসারে, জার্মানির বিজনেস সেন্টিমেন্ট সূচক ১৯.৯ পয়েন্টে পৌঁছাতে পারে, যা জুলাই ২০২৪ সালের পর সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে জানুয়ারিতে এই সূচক ১০.৩ পয়েন্টে নেমে গিয়েছিল। ইউরোপের সামগ্রিক ZEW ইকোনোমিক সেন্টিমেন্ট সূচকও ইতিবাচক গতিশীলতা দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২৪.৩ পয়েন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবারের মূল বক্তারা হচ্ছে সান ফ্রান্সিসকো ফেড প্রেসিডেন্ট মেরি ডালি (যিনি এই বছর ভোটাধিকারপ্রাপ্ত) ও ফেড গভর্নর মাইকেল বার, যিনি তার স্থায়ী ভোটাধিকারের কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইজন কর্মকর্তাই সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনের উপর মন্তব্য করতে পারেন এবং ২০২৪ সালে মুদ্রানীতি নমনীয় করার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতে পারেন।
বুধবার
বুধবার, ফেডের জানুয়ারির বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশিত হবে। ওই বৈঠকে, ফেড মুদ্রানীতির অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রানীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়, কারণ মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চমাত্রায় রয়েছে এবং মার্কিন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া, ফেড তাদের আগের বিবৃতির "মূল্যস্ফীতি ২% লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগোচ্ছে" বাক্যাংশটি বাদ দিয়ে "মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে" বলে উল্লেখ করেছে। এই পরিবর্তন হকিশ বা কঠোর অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনের ফলাফলের প্রতি ফেডের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে। পাওয়েল এই পরিবর্তনকে "প্রযুক্তিগত" হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, যা কোনো গভীর অর্থ বহন করে না বলে দাবি করেছেন। ফলে, FOMC-এর মিনিট বা কার্যবিবরণী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে; যদি এটি হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণের বার্তা বহন করে, তাহলে সাম্প্রতিক CPI এবং PPI প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে মার্কিন ডলার উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেতে পারে।
বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবার, মার্কিন সেশনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যদিও এগুলো গৌণ গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফেব্রুয়ারির ফিলাডেলফিয়া ফেড ম্যানুফ্যাকচারিং সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন হবে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সূচক 44.3 থেকে 19.4 এ নেমে আসতে পারে। যদি প্রকৃত ফলাফল প্রত্যাশার চেয়েও দুর্বল হয়, তাহলে এটি মার্কিন ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, সাপ্তাহিক বেকার ভাতা আবেদন (জবলেস ক্লেইমস) সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। গত সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল +213,000, এবং আগামী সপ্তাহের জন্য এটি প্রায় +214,000-এ থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে, যদি প্রকৃত ফলাফল পূর্বাভাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম বা বেশি হয়, তাহলে এটি EUR/USD পেয়ারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বৃহস্পতিবার ফেড কর্মকর্তাদের মধ্যে ফেডের ভাইস চেয়ারম্যান ফিলিপ জেফারসন, সেন্ট লুইস ফেড প্রেসিডেন্ট আলবার্তো মুসালেম (যিনি ২০২৫ সালে ভোটাধিকার পাবেন), শিকাগো ফেড প্রেসিডেন্ট অস্টান গুলসবী (যার এই বছর ভোটাধিকার রয়েছে) বক্তব্য দেবেন।
শুক্রবার
সপ্তাহের শেষ দিনের ট্রেডিংয়ে PMI সূচক প্রকাশিত হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী: জার্মানির ম্যানুফ্যাকচারিং PMI সূচক 45.4 এ পৌঁছাতে পারে এবং ইউরোজোনের সামগ্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং PMI সূচক বৃদ্ধি পেয়ে 46.9 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এই সূচকগুলো সংকোচন অঞ্চলে থাকার পূর্বাভাস রয়েছে, তবে সামান্য উন্নতি দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, সার্ভিসেস PMI সূচক ইতিবাচক অঞ্চলে থাকার সম্ভাবনা থাকলেও সামান্য হ্রাস পেতে পারে—যা জার্মানিতে 52.4 এবং ইউরোজোনের ক্ষেত্রে 51.1-এ পৌঁছাতে পারে। যদি এই সূচকগুলোর প্রকৃত ফলাফল প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়, তাহলে এটি EUR/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
শুক্রবার মার্কিন সেশনে ISM ম্যানুফ্যাকচারিং PMI প্রকাশিত হবে, যা 51.2 স্তরে থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ডলার ক্রেতাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে এই সূচক 50 পয়েন্টের নিচে না নামে, কারণ এটি সূচকটির নিম্নমুখী হওয়ার সংকেত দেবে।
ট্রেডারদের মিশিগান ইউনিভার্সিটি কনজিউমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স-এর উপরও নজর রাখা উচিত। এই সূচক গত দুই মাস ধরে নিম্নমুখী রয়েছে, এবং ফেব্রুয়ারিতে এটি তৃতীয়বারের মতো কমে 67.2 পয়েন্টে নেমে আসতে পারে। তবে, যদি এই সূচকের ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আসে, তাহলে এটি মার্কিন ডলারকে ব্যাপক সমর্থন প্রদান করতে পারে।
দৈনিক চার্টে, EUR/USD পেয়ারের মূল্য এখনো কুমো ক্লাউডের মধ্যে অবস্থান করছে এবং বলিঙ্গার ব্যান্ডস সূচকের মাঝারি ও উপরের লাইনের মধ্যে ওঠানামা করছে। যদি এই পেয়ারের মূল্য কুমো ক্লাউডের উপরের সীমানার ওপরে স্থিতিশীল হয়, তাহলে ইচিমোকু সূচকে একটি বুলিশ "প্যারেড অব লাইন্স" সংকেত তৈরি হবে, যা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.06 লেভেলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য 1.0390 লেভেলের নিচে নেমে যায়, তাহলে মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডস সূচকের মাঝারি ও নিম্ন লাইনের মধ্যে অবস্থান করবে এবং ইচিমোকু সূচকের সব লাইনের নিচে চলে যাবে, যা এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা নিশ্চিত করবে।